শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৮ অপরাহ্ন

ঈদযাত্রায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ভোগের শঙ্কা

ঈদযাত্রায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ভোগের শঙ্কা

স্বদেশ ডেস্ক:

আসন্ন ঈদুল ফিতরের ঈদযাত্রায় ঢাকা-ময়মনসিংহ-মহাসড়কে দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন চালক, পথচারী, যাত্রীসহ স্থানীয় এলাকাবাসী। মহাসড়কে দীর্ঘ সময় ধরে বিআরটি প্রকল্পের চলমান কাজ, খোঁড়াখুঁড়িতে- বেহাল দশা, অটোরিকশার দাপটে এই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন দুর্ভোগ নিরসন ও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুর ছাড়বেন অনেকেই। তবে গন্তব্যে পৌঁছাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দুর্ভোগে পড়তে পারেন তারা। এই মহাসড়কের গাজীপুরের টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশে এবার ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ বাড়বে।

এ ছাড়া বিআরটি প্রকল্পের ধীরগতির নির্মাণকাজ, সড়কে বিভাজন না থাকা, মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে অবৈধ বাজার, ভাসমান দোকান, সড়কে নির্মাণ সামগ্রীর স্তুপ, অবৈধ অটোরিকশার দাপটসহ বেশ কয়েকটি কারণে এবারের দুর্ভোগ আগের চেয়েও বাড়তে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়কপথে উত্তবঙ্গের প্রায় ৩২ জেলার মানুষ রাজধানী ঢাকা ছাড়তে ব্যবহার করেন এই পথ। গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সরকারের মেগা প্রকল্প বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) নির্মাণকাজ চলছে ধীরগতিতে। এর মধ্যে গাজীপুরের টঙ্গী ব্রিজ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ।

আবর বাটা গেট থেকে স্টেশন রোড, গাজীপুরা, ভোগড়া বাইপাস মোড়, চান্দনা চৌরাস্তায় মহাসড়কের অনেক স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোট বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। আবার প্রচুর পরিমাণে ধূলোবালির কারণে ভোগান্তির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বর্তমানে আধ ঘণ্টা রাস্তা অতিক্রম করতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগছে।

কোথাও উড়াল সেতুর স্ল্যাব বসানো, কোথাও সড়ক মেরামত আবার কোথাও চলছে উড়াল সেতুর পিলার নির্মাণকাজ। সড়কের একদিকে চলছে উন্নয়নকাজ, অন্যদিকে সংকুচিত হয়ে যাওয়া সড়ক দিয়ে চলছে যানবাহন। এ কারণে সারা বছরই সড়কটিতে দিন-রাতের অধিকাংশ সময় দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট। ঈদের সময় সেই যানজট বেড়ে আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে স্বাভাবিকভাবে। আসন্ন ঈদুল ফিতরেও ঈদযাত্রায় শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়কটির ১২ কিলোমিটার অংশ।

বিআরটির ধীরগতির নির্মাণকাজ

আব্দুল্লাহপুর পার হলেই টঙ্গী। আর দুর্ভোগের শুরুটাও এখান থেকেই। টঙ্গীর শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামের সামনে উড়ালসড়কের কাজ চলছে। এর ফলে ওই জায়গায় সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়ায় স্টেশন রোড পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। স্টেশন রোড এলাকায় মহাসড়কের মাঝখানের প্রায় ৩০ থেকে ৪০ফিট জায়গা বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড করা।এ কারণে সড়কটির দুই পাশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

স্টেশন রোড পেরিয়ে আরেকটু সামনে এগোলেই মিলগেইট এলাকা।এখানে আনুদিপ সিএনজি স্টেশনের সামনে মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে বিআরটির পিলার নির্মাণের জন্য বড় বড় দুটি গর্ত খোঁড়া হয়েছে। এ কারণে ঢাকামুখী লেনে গাড়ি চলছে সংকুচিত এক লেনে। মিলগেইট এলাকা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কে কার্পেটিং হয়নি। মিলগেইট পার হয়ে চেরাগআলী মার্কেটের আগ পর্যন্ত রাস্তায় নির্মাণ করা হচ্ছে উড়াল সেতুর পিলার।

আবার কলেজগেট এলাকায় মহাসড়কের মাঝখানে চলছে উড়ালসেতুর গাড়ি ওঠা-নামার লেন। কলেজগেট পেরিয়ে সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি কলেজের সামনে বিআরটির স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানেও মহাসড়কের দুই পাশের লেন সংকুচিত হওয়ায় যানচলাচলে ধীরগতি রয়েছে। এ পথ ধরে কুনিয়া বড়বাড়ি, বোর্ডবাজার, মালেকের বাড়ি এলাকায় বিআরটি প্রকল্পের স্টেশন তৈরির কাজ চলমান। সেখানে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না।

মহাসড়কে অটোরিকশা ও ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য

মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও গাজীপুরের কোথাও সেটি মানা হচ্ছে না। নগরীর টঙ্গী, গাজীপুরা, বড়বাড়ি, বোর্ডবাজার, মালেকের বাড়ি ও ভোগড়া বাইপাস এলাকায় অটোরিকশা ও ইজিবাইকের দৌরাত্ম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১২ কিলোমিটার মহাসড়কের যানজটের অন্যতম কারণ এই ধীরগতির বাহন।

ঈদের সময় যানজট পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা জানিয়ে গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমদ সরকার বলেন, প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক দিয়ে কয়েক হাজার যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও লরি চলাচল করে। রাস্তা ভালো না হলে এবার ঈদযাত্রায় যানজট থেকেই যাবে।

এদিকে, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ৬০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদের আগে এই সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

ট্রাফিকের জনবল ৩০০ জন জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ঈদ উপলক্ষে পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত আরও ১০০ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

আব্দূল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যেকোনো মেগা প্রজেক্টের কাজ চলমান থাকলে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। তবে আমরা বিআরটির কাজে দায়িত্বরতদের বলেছি সড়ক সংষ্কার করে দিতে। তারা আশ্বাস দিয়েছে ঈদের আগেই সেগুলো সমাধান করবে।’

পোশাক কারখানার শ্রমিকদের একসঙ্গে ছুটি না দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ট্রাফিকের এই কর্মকর্তা বলেন, গাজীপুরে প্রায় ২০ লাখ পোশাক শ্রমিক রয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পোশাক কারখানার মালিকদের অনুরোধ করেছি যেন শ্রমিকদের একসঙ্গে ছুটি না দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন শিফটে ছুটি দেয়। এ ছাড়াও কারখানার ভেতর থেকেই রিজার্ভ গাড়ির ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছি।

মহাসড়কের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ বাজারের বিষয়ে থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে জানিয়ে মামুন বলেন, থানা পুলিশ অবৈধ বাজারের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। অন্যদিকে মহাসড়কে অবৈধ অটোরিকশা ও ইজিবাইকের দৌরাত্ম্য কমাতে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিদিনই ডাম্পিং করা হচ্ছে অটোরিকশা-ইজিবাইক।

মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ পুলিশকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা।

বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৭৩ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে রাস্তার দুই পাশে ড্রেন নির্মাণ সম্পন্ন হলেও উড়াল সড়ক ও ওভারপাস সড়কের লেনগুলোর নির্মাণকাজ চলছে। ঈদযাত্রার কথা মাথায় রেখে প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ঈদের আগে সড়কটি পুরোপুরি চলাচলের উপযোগী করে তোলা হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877